নাটোর জেলা রোভার এর রোভার অঞ্চলের রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ৩৯/১৯৮৯ তারিখ : ০৮/০৮/১৯৮৯ ।
নাটোর চলনবিলের অবারিত জলরাশির কোলে গড়ে উঠা একটি সম্বৃদ্ধির জনপদ। অর্ধবঙ্গেশরি রাণী ভবানীর স্মৃতি বিজরিত উত্তরা গণভবন ও কাঁচাগোল্লা ক্ষেত রাজ রাজকিয় ঐশ্বয মন্ডিত জেলা নাটোর। জীবনান্দ দাসের কিংম্বাদন্তি তুল্য বনলতা সেন এই জেলার ক্ষেতির পালায় যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। এক গৌড়বাদে উত্তরবঙ্গের সমস্ত স্বপ্নগুলোর মধ্যে নাটোর প্রাচীনতম শহর। ১৭৬৯ সাল থেকে ১৮১৫ সাল পযন্ত এটি ছিল রাজশাহী জেলা সদর। প্রশাসনিক নাটোর মহকুমা সৃষ্টি হয় ১৮৪৫ সালে এবং ১৮৬৯ সালে নাটোর পৌরসভা স্থাপিত হয়। সর্বশেষ ১৯৮৪ সালে নাটোর একটি পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
নাটোর শহর থেকে ৩ কি.মি. উত্তরে ইতিহাস ক্ষেত দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী তথা উত্তরা গণভবন অবস্থিত। রাণী ভবাণী তার নায়েব দয়ারামের উপর সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে দিঘাপতিয়া বরগুনা উপহার দিয়েছিলেন। যিনি এই রাজবাড়ীর প্রতিষ্ঠাতা। জমিদারী প্রথা বিলুপ্তি হবার পর ১৯৫২ সালে দিঘাপতিয়ার শেষ রাজা প্রতিভা নাথ রায় স্বপরিবারে রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করে কলকাতায় চলে যান। প্রসাদটি ১৯৬৬ সালে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রনে আসে এবং নামকরণ করা হয় গর্ভনর হাউজ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিঘাপতিয়া রাজবাড়ীকে উত্তরা গণভবন হিসেবে ঘোষনা করেন। এটি বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাঞ্চলিয় বাস ভবন হিসেবে পরিচিত।
ঐতিহাসিকদের মতে অষ্ঠাদ্বশ শতকে নাটোর রাজবংশের উৎপত্তি। রাজা রামজীবন রায় এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। যাঁর পুত্রবধুই ছিলেন ইতিহাস ক্ষেত রাণী ভবানী। মৃত্যুর পূর্বে রাজা রামজীবন পুত্র রামকান্ত রায় কে রাজা এবং দেওয়ান দয়ারামকে তাঁর অভিভাবক নিযুক্ত করেন। রামকান্ত রাজা হলেও প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ন রাজকাযাদি পরিচালনা করতেন দয়ারাম রায়। ১৭৪৮ সালে রাজা রামকান্তের মুত্যু পরে রাণী ভবানী জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন করেন। নাটোরের ইতিহাসে তিনি জনহিত্যষী মহারাণী হিসেবে অভিভূত এবং আজও তার স্মৃতি অম্লান।
বাংলাদেশের সর্ববৃহত বিল চলনবিল, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার বিস্তর্ণ অঞ্চল জুড়ে এর অবস্থান। শুকনো মৌসুমে এখানে ফসলের প্রাচুয্য আর বর্ষাকালে চলনবিল কানায় কানায় পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে দুকুল ছাপানো অনিন্দ সুন্দর রূপ ধারন করে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় কক্সবাজার বলা হয় চলন বিলের একাংশকে যেটি পাটুল বা হালতি বিল নামে সর্বাধিক পরিচিত। এই বিলে এক সময় ঝাঁকে ঝাঁকে বিরল প্রজাতির হালতি পাখি বসতো বলেই এর নামকরণ করা হয়েছিল হালতি বিল।
নাটোর জেলার দক্ষিণ সীমানায় বড়াইগ্রাম উপজেলায় লুর্দের রাণী মা মারিয়ার ধর্ম পল্লী অবস্থিত। ১৯৪০ সালে ইতালীয় বংশোদ্ভুত ধর্মযাজক ফাদার থমাস সর্ব প্রথম একটি স্বতন্ত্র ধর্ম পল্লী হিসেবে ঘোষনা করেন। পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে লুর্দের ফারিয়ার নামে বনপাড়ায় এই গীর্জাটি নির্মিত হয়।
এছাড়াও নাটোরে রয়েছে দয়রামপুর রাজবাড়ী, ঔষধী গ্রাম, চৌগ্রাম জমিদার বাড়ি, পাখি গ্রাম প্রভৃতি দর্শনীয় স্থান। প্রাচীন ঐতিহ্যে আর পুরাকীর্তির জেলা নাটোর। সভ্যতা ও সংস্কৃতির অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এই জেলার আনাচে-কানাচে। পাশাপাশি রয়েছে দীগন্ত বিস্কৃত চলন বিলের মনোমুগ্ধকর সুন্দয। প্রকৃত আর ঐতিহ্যের তীর্থ স্থান রাজসিক নাটোরে আপনাকে স্বাগতম।